ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ১২



মৃত পাখিদের কন্ঠস্বর

                  শ্রীজিৎ দাস


ঝড়।
আঁধার এ কার্নিশ জুড়ে,
ঘুমের খুব গভীরে,
বয়ে যায়।
জল।
জোনাকি খুব কাছে তার,
শীতল এক অন্ধকার,
মোহময়।
বন।
হাওয়ায় জুঁইয়ের সুবাস,
চাঁদ মাখা নরম ঘাস,
ভিজে যায়।
চুপ।
আবার সব নিশ্চুপ,
ঘরমুখো মেঘের স্তূপ,
এভাবে বাড়ি ফেরে রোজ।
জ্যোৎস্না।
ধোয়ায় কচুর পাতা,
হরিণ নামালো মাথা,
সারা রাত কস্তুরী খোঁজ।
অবতার।
ওখানে দুদন্ড আর,
বিশ্রাম আছে পাওয়ার,
হঠাৎ ভেঙে যায় সংযোগ।


© 2020  শ্রীজিৎ দাস 

ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ১১



সোনাঝুরি

         অন্বিতা চ্যাটার্জী

একটা বাড়ি বানাবো বুঝলি?

নাম দেব সোনাঝুরি।

কোনো ইঁট-সিমেন্টের বাড়ি নয়,

মুহূর্ত দিয়ে তৈরি করব ওটা,

যাকে অবলম্বন করে বেড়ে উঠবে

আমাদের ইচ্ছেবৃক্ষ।

যেখানে আমাদের ডাকে সন্ধ্যা নামবে,

ঢেকে দেবে তোর রাগের তীক্ষ্ণ আলোকে।

যে বাড়ির আনাচে-কানাচে জন্ম নেবে আমাদের স্বপ্ন,

বেড়ে উঠবে তিল তিল করে।

অভিমানের বৃষ্টিতে ভিজব যখন আমরা,

তুই গল্প বলে শোনাবি 'মেঘবালিকা'-র।

তোর কোলে মাথা রেখে

কাটিয়ে দেব আরেকটি বিনিদ্র রাত।

খুব ঝগড়া করব আমরা,

তুই মজবি রবিশঙ্করে, আমি খুঁজব রাবীন্দ্রিক প্রেম।

তবুও আমরা একটা অন্য গল্প লিখব,

যেখানে ব্যর্থতা থাকবে, সাফল্য থাকবে,

কিন্তু "ছেড়ে যাওয়া" শব্দদুটো এক্কেবারে উধাও।

এইভাবে ভালো-মন্দ বাসায় বেড়ে উঠবে

আমাদের সোনাঝুরি।

 

© 2020 অন্বিতা চ্যাটার্জী


ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ১০


কবি চন্দন আচারের লেখা দু'টি কবিতা

 

কবিতা ১

 

তুমি আমায় রাত্রি দিলেও নেবো

আছো যখন আলো হয়ে পাশে,

তুমি আমায় সকাল দিলেও নেবো

তোমার হাসি সূর্য হয়ে হাসে।

 

মাথা তুলে থেকো, তুমি মাথা তুলে রেখো

যেমন করে প্রথম বীজপত্র মাথা তুলে

কচি দুটো হাত বিজয়ী ভঙ্গিমায় তুলে ধরে।

 

যেমন করে কাণ্ডহীন লতাও

সদাই মাথা তুলতে চায়

সদাই উঠতে চায় আরো উপরে।

 

মাথা তুলে থেকো, তুমি মাথা তুলে রেখো।

যেমন মাথা তুলে আছে সদাভঙ্গুর প্রাচীন পাহাড়,

যেমন করে তরল ঢেউও মাথা তোলে বারবার।

বা যেমন করে লাগামে বাঁধা ঘোড়া মাথা তোলে

যেমন করে বুকে হাঁটা সদা অবনত সর্প মাথা তোলে।

যেমন করে আহত পিপীলিকাও মাথা তুলে

সহস্রগুণ শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে প্রতিবাদ জানায়।

 

 

কবিতা ২

                                                                          

আমার হৃদয়ে বাড়তে থাকা গাছ ছুঁয়েছে আকাশ

আজ তার পাতার কোলে ফুলের কুঁড়ি

কুঁড়ির অন্তরে ফুলের সুবাস।

 

আমার হৃদয়ের ছোট্ট সে নদী

এখন অনেক বড়ো, অনেক আঁকাবাঁকা

নৃত্যময় শরীরে সাগর খোঁজার উচ্ছলতা।

আমার বারণ শোনার মতো ছোটো নেই সে নদী

আজ তার পাড় ভাঙার নেশা দুর্নিবার।

 

আমার হৃদয়ে গান গাওয়া পাখি

বাসা বুনেছে কয়েকদিন হলো।

আজ তার “প্রিয়া” “প্রিয়া” ডাকে

মাতাল আমার মনের আকাশ।

 

আমি একটি কিশোরী কুঁড়ি খোঁপায় গুঁজে

নদীতে পা ডুবিয়ে বসে বসে

ঐ পাগল পাখির গান শুনি

বেলা-অবেলা।

 

আমার হৃদয়ে বাড়তে থাকা গাছ ছুঁয়েছে আকাশ

আজ তার পাতার কোলে ফুলের কুঁড়ি

কুঁড়ির অন্তরে ফুলের সুবাস।

 

আমার হৃদয়ের ভার এ পৃথিবীর চেয়েও ভারী

তবুও এক লহমায় আমি পাহাড় ডিঙোতে পারি।

 

 

© 2020 চন্দন আচার


ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ৯


প্রতীক্ষা

              প্রীতি মাইতি

 

হ্যাঁ, নিঃসঙ্গতা কাটাতে তোমার কাছে আসা।

সুখে দুঃখে তোমায় কাছে পাওয়া।

সুদূর প্রান্ত থেকে যখন‌ তোমায় খুঁজেছি,

এসেছো নিজের মত করে আগলে রেখেছ

কঠোর জীবন থেকে সরিয়ে প্রকৃতির কোলে আশ্রয় করে দিয়েছো।

 

ঋণী, সত্যিই ঋণী তোমার কাছে।

 

তাই, অগোচরে নিজের এক সত্তা তোমায় বিলিয়ে দিয়েছিলাম।

তুমিও বেশ ভালোবেসে তা গ্রহণ করে আমায় ভিজিয়ে পরিপূর্ণ করেছো।

 

বড়ো হলাম, তোমায় আরও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরলাম।

সংসার পাতলাম আমার ঘরের ছোট্ট বারান্দায়।

 

সুখী সংসার আমাদের-

 

মন খারাপের সময়,

যখন আমি অগোছালো থাকি;

উষ্ণতার তুলি দিয়ে তুমি তখন নিজের মত আঁকিবুকি টেনে গোছাও আমায়।

মনে হয়, আমার জন্যই তোমার সৃষ্টি ।

 

কিন্তু,

হঠাৎ একদিন বাস্তব এসে তোমার রূপ দেখায়।

তুমি আমার হাত ধরছো তো অন্যের সংসার ভাঙছো,

আবেশে জড়িয়ে ধরছো আমায় তো অন্যকে ছারখার করছো।

 

মুখ ফেরালাম অবশেষে।

আমার জন্য নয়, তুমি এসেছো এখন, আসবে আবার তোমার নিয়মে।

 

চাইলে আপন করে নিও, থেকো আমার সাথে

দূর থেকে থাকব তোমার প্রতীক্ষাতে।

 

© 2020 প্রীতি মাইতি



ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ৮


সভ্যতার বর্বরতা
               শিবম মাইতি

 

নিভে যাওয়া আগুনের শুকনো কালি

পাহাড় হয়ে থাকা জঞ্জালের স্তূপের মতই,

পরিস্কার কাচের মত, কোনদিন মিথ্যা বলেনি।

মৃত আগুনের পর ধূসর, কালো, নির্বাক কালি

আমার কাছে সহজ, স্বচ্ছ সাদা।

সে দেখিয়েছে সভ্যতার আলোয়

জ্বলতে থাকা উজ্জ্বল, চকচকে মুখোশের পেছনে

সভ্য সমাজের বেহায়া, বর্বর, অশ্লীল, অমার্জিত রূপ।

 

তাই মিথ্যা বহুরূপী পৃথিবীর বুকে

সভ্যতাকে পাল্লা দিতে,

একা জঞ্জালের স্তূপটাই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।

তার সুস্পষ্ট, সুগন্ধি, বিকট সুবাস আমার শরীরে

সে যেমন সে তেমনি ...

তার শরীরে কোন কাপড় নেই ...

 

© 2020 শিবম মাইতি


ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ৭

বুড়ো নারকেল গাছ আর তার সঙ্গীরা

                                                     কুন্তল বর

জানলার পাশের নারকেল গাছটার পুরোনো স্বভাব, কথা নেই বার্তা নেই, যখন তখন দুম করে এক একটা ডালা খসিয়ে ফেলে। তা, এমনই চলে আসছে আজ বহুবছর ধরে। কিন্তু বেশ এই কয়েকমাস হল দেখছি গাছটা আর দুমদাম ডালা খসায় না। এইত্তো সেদিন কী একখানা ঝড় হল, ডালা দূরে থাক, কই একখানা পাতাও তো ঝরেনি!  গাছটার লাগোয়া ওদের বাড়ির বক্স জানলার শেডে প্রায় একটা ইয়া সাইজের প্যাঁচা দেখতাম। দিনের বেলা কাকের হাত থেকে রেহাই পেতে গাছের পাতা আর বাড়ির আড়ালে চুপচাপ ঘাপটি মেরে বসে থাকত। তাকেও তো দেখিনা আজকাল। গাছটার প্রায় মাঝামাঝি রোজ একটা কাঠঠোকরা এসে ঠুকঠাক করে আশেপাশের চারটে ঘরের প্রায় দু’ডজন লোকের কানের বারোটা বাজাতো, একাই! বেশ জুতসই একখানা গর্ত করেছিল, এখনও দেখি গর্তটা আছে। শুধু কাঠঠোকরা টা বসে নেই। চারঘরে বেশ শান্তিও আছে দেখি। চারটে কাক ঘুরে বেড়াতো এই চত্বরে। এখন তদেরও টিকি পাওয়া যায় না। কাঠবেড়ালি গুলো আর গাছটার ধারেকাছে বিশ্রাম নেয় না। তবুও বেশ দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে গাছখানা!

 

© 2020 কুন্তল বর


ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ৬



মেহবুব গায়েন এর কবিতা


১.গোলাপ পৃথিবী

যে রাত আলোর সঙ্গে হারিয়েছিল,
বর্ষা চারপাশ শূন্য শব্দ
গোলাপ পৃথিবীর সঙ্গে যুদ্ধ তোমার-আমারও
পাক খাই
থুবড়ে পড়ি শৈশব আঁধার,
ফিরি তুমি ও আমি কোন এক হারানো চাঁদ পথে...

 

2.অসমাপ্ত আকাশ

পুড়িয়ে দাও আমাকে দর্শন আগুনে
ছাইগুলো উড়ে যাক বাতাসে,
ফাগুনের রং ছিঁড়ে কোমল শরীরে বসাও
জীবন্ত লাশ কেটে রাখো টেবিলে
আমি চাঁদ ভাঙি
পূর্ণিমাকে অসমাপ্ত লিখে অসমাপ্ত আকাশে...

 

© 2020 মেহবুব গায়েন
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- সাদা সাইকেল
প্রকাশনা - কবিতা আশ্রম
কলকাতা বইমেলা ২০২০


ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ৫

 

প্রতিবাদী বেগ

                সুদীপ্তা মাইতি

প্রতিটি রিকশাচালক,
একপ্রকার প্রতিবাদী বেগে চলে।
ঝড় - বৃষ্টিমাখা রাতে
কিংবা ঝলসানো রোদে,
যাত্রীসমাজ বাঁধে তারে
দাম-দরের গরাদে।
ভোর - কুয়াশায় চাকা ছোঁয়ায়
স্টেশনে - স্টেশনে,
লবণ - মুক্তো গড়িয়ে পড়ে
নগ্ন পা -এর পানে।
প্রতিটি রিকশাচালক,
একপ্রকার প্রতিবাদী বেগে চলে।

 

© 2020 সুদীপ্তা মাইতি


ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ৩


রইলাম প্রতীক্ষায়

                 প্রতীক মহাপাত্র

  মৌলালি যুবকেন্দ্রের মঞ্চের মৃদু আলো তখনও নেভেনি। সৌজন্য বিনিময় করে বেরিয়ে এলাম হল থেকে। সাড়ে আটটার ট্রেনে বাড়ি ফিরতে হবে। সময়টা ২০১৭-র জুনের শেষের দিক। সেই সময় যখন দীপকদা (দীপক গাঙ্গুলী)-র সাথে পরিচয়, তখন থেকেই আমরা খুব আকর্ষণীয় একটা স্কেচবুক তৈরির কথা ভাবতে আরম্ভ করেছিলাম যেখানে ভারতের প্রখ্যাত কিছু জাতীয় উদ্যান (National Park) এবং অভয়ারণ্যের (Wildlife Sanctuary) কিছু নামজাদা বাঘেদের ছবিসহ তাদের 'ব্যক্তিগত' জীবনের খুঁটিনাটি সব থাকবে। সে বছরের শেষের দিকে ওঁর পাঠানো একটা টেক্সটের হাত ধরেই আমাদের কানহা সফরের সূত্রপাত ঘটেছিল বলা যায়। পেশাগতভাবে দীপকদা টেকনিকালারের একজন অ্যানিমেটর আর ডিপ নিব ইঙ্ক ড্রয়িংয়ে বাঘেদের স্কেচ আঁকা তাঁর নেশা। যখন উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে 'ব্রেভ হার্টস্ অব ইণ্ডিয়া' শীর্ষক আসন্ন এই বইটির জন্য আমি কিছু বাঘেদের নিয়ে লিখতে আগ্রহী কি না, আমার কাছে হ্যাঁ বলায় দ্বিমত প্রকাশের কোনও জায়গাই ছিলনা। প্রসঙ্গত, এই প্রজেক্টের সাথে যুক্ত ছিলেন আরও দু'জন মানুষ- বন্যপ্রাণ আলোকচিত্রী বালাজী লোগোনাথন এবং চিত্রশিল্পী কিরণ ভাট। ঘটনাচক্রে বই সংক্রান্ত কিছু আলোচনার পর্ব এমনভাবে এসে উপস্থিত হলো যে টেলিফোন কনফারেন্সে আর খুব বেশিদিন সফলভাবে কথাবার্তা এগনো দুরূহ হয়ে পড়লো। অগত্যা, গন্তব্য স্থির হলো কানহা জাতীয় উদ্যান। '১৭-র নভেম্বরে টিকিট কাটা হলো এবং রিসর্ট বুকিং পর্ব সেরে ফেললাম। প্রাথমিক কিছু আলোচনা ও গোছগাছ সেরে অবশেষে এসে উপস্থিত হলো সেই বহু আকাঙ্খিত দিন- ২০১৮-র ১১ জানুয়ারি।

কানহার পথে

  জীবনে কখনও ভাবিনি অরণ্যসফরের সূচনা ঘটবে কানহার মতো এত বিশাল ব্যাপ্তির জাতীয় উদ্যানের বুকে। সুতরাং মনের মধ্যে প্রবল উৎসাহ দানা বাঁধতে লাগলো। কলকাতা থেকে কোনও সফর সঙ্গী না থাকায় সম্পূর্ণ একাই পাড়ি দিলাম। প্রাথমিকভাবে ঝঞ্ঝাট বাধালো আমার বুকিং করা ট্রেন স্বয়ং- সাত ঘন্টা দেরীতে এসে পৌঁছবেন তিনি! টিকিট বাতিল করে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসের কম্পার্টমেন্ট বুক করলাম। দু'ঘন্টাও সফর শুরু হয়নি, চরম আর এক বিভ্রান্তি- থার্ড ইয়ারের (বি.এ.) পরীক্ষার রুটিন ও ফর্ম ফিল আপের যাবতীয় নোটিশ দেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে খবর দিল বন্ধু তন্ময়। এসব শোনার পর রেল সফরের প্রথম দিকটা যে বেশ কিছুটা বিস্বাদের মধ্যে কেটেছিল, একথা বললে অত্যুক্তি হয়না। যাই হোক, রাত্রিযাপন ট্রেনেই। এলো পরের দিনের সকাল। স্টেশন থেকে একে একে সব জিনিসপত্র গাড়িতে তুললাম।  নাগপুর স্টেশনেই সাক্ষাৎ হলো বালাজী স্যারের সাথে। দরাজদিল মানুষ। সহাস্য বদনে এগিয়ে এসে হ্যাণ্ডশেক করে ক্যামেরা কিট্ গাড়িতে তুললেন। ওদিকে ততক্ষণে নাগপুরে এসে গেছেন দীপকদাও। স্টেশনে আমাদের সাথে দেখা করতে এলেন আরও এক বাঘপাগল অরণ্যপ্রেমী সাগ্নিকদা- সাগ্নিক সেনগুপ্ত। সাগ্নিকদা তখন পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের শাকম্ভরী রিসর্টের সাথে যুক্ত ছিলেন। অবশেষে এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। এসে পৌঁছলেন কিরণ ম্যামও। সাগ্নিকদাকে বার বার অনুরোধ করলাম রাতে কানহায় চলে আসুন। বুঝলাম ইচ্ছুক উনি, কিন্তু স্পষ্টভাবে জানালেননা আসবেন কি না। ফোনে প্রতুত্তরের অপেক্ষায় থেকে আমরা এগোতে থাকলাম। এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের গাড়ি যখন মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে ধাবমান, মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই পেঞ্চ জাতীয় উদ্যানের অবস্থিতির কারণে দীপকদা বায়না জুড়ে বসলেন। এত কাছে এসেও ওইদিনের বিকেলে পেঞ্চে একটা সাফারি বুক করব না- এটা আমরা কেউই ভাবতে পারলামনা। সেখানে তুলি টাইগার করিডোরের কর্ণধার আমাদের অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু ও পরিচিত মানুষ গাইড ওমবীর চৌধুরী। সাদর আমন্ত্রণ জানালেন চৌধুরী সাহেব। পৌঁছনোয় ও সাফারি ব্যবস্থাপনায় কোনও ত্রুটিই হয়নি। তুরিয়া জোনে ইভনিং শিফটে বেরিয়ে আমরা সবাই আশায় ছিলাম পেঞ্চ সম্রাজ্ঞক কলারওয়ালির সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য। ২০০৫ সালে জন্ম হয় বিবিসি-র 'টাইগার- দ্য স্পাই ইন দ্য জাঙ্গল' খ্যাত এই বাঘিনীর। যে এখনও পর্যন্ত আটবারে জন্মগ্রহণ করা সর্বমোট তিরিশটি শাবককে বড়ো করে তুলতে পেরেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কলারওয়ালির দেখা আমরা সে বিকেলে পাইনি। তার পরিবর্তে দেখা হলো তার বোন লঙ্গড়ীর প্রায় দু'বছর বয়সী দুই ছেলের সাথে। গাড়ি পথে দাঁড় করিয়ে ডানদিকের একটি টিলার দিকে দূরবীণে চোখ রেখে দেখতে পেলাম এগিয়ে আসছে দুই প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ- দুই ভাই। একজন একটু বেশিই লাজুক। গাড়ির উপস্থিতি টের পেয়ে সে না এগিয়ে টিলার ওপরের ঝোপের মধ্যে বসে পড়লো। তার ভাই যে এত লাজুকতার ধার ধারেনা সে কিছুক্ষণ বাদেই রাস্তা পেরোনোর পথ না পেয়ে এগিয়ে এসে মৃদু গর্জন করে চার্জ করে বুঝিয়ে দিল। আমাদের গাইড শর্মিলা যাদব বলেছিলেন তুরিয়া গেটের কাছেই এক পুরুষ চিতাবাঘ (Leopard) সকালে চিতল হরিণের (Spotted Deer) ভোজ সেরে কাছাকাছি বিশ্রাম নিচ্ছে। আমরা পথের পাশের গাছগুলোর ওপর নজর রাখছিলাম যদি শিকারের অবশিষ্টাংশ দেখে আমরা শিকারীর দিশা খুঁজে পাই। কিন্তু সবাই আশ্চর্য হলাম যখন মিনিট পাঁচেক ড্রাইভ করার পরেই আমরা ছোপধারী শিকারীকে দেখলাম একটি বড়ো পাথরের ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছে দেখে। বাঘের চেয়েও চিতাবাঘের দেখা পাওয়া রীতিমতো দুঃসাধ্য এদের লাজুক স্বভাবের জন্য। সফরের আগে প্রায় সকল বন্ধুবান্ধব বা প্রিয়জনেদের বলতাম যে শুভেচ্ছা জানালে তা যেন চিতাবাঘ দর্শনের সাফল্য কামনা করেই জানানো হয়। সবার শুভেচ্ছা সেদিন সত্যিই সার্থক হয়েছিল। পেঞ্চের বিদায়ী বিকেলের পড়ন্ত রোদে আমরা সাফারি জিপ ছেড়ে যখন নিজেদের গাড়িতে উঠতে যাবো, তখনই সাগ্নিকদার ফোন- "চল, এগোতে থাক। রাতে কানহায় দেখা হচ্ছে।" নির্জন রাস্তায় আমাদের গাড়ির পাশে গাড়ি এনে হাত নেড়ে ইশারা করে যা ভয়টাই দেখিয়েছিলেন সেকথা বলতে আরম্ভ করে এ লেখার কলেবর বাড়াতে চাইনা। সে স্মৃতিচারণা নাহয় কখনও আলাদা প্রসঙ্গে হবে। কনকনে শীতের মধ্যে জবুথবু হয়ে যখন আমরা আমাদের কাঙ্খিত রিসর্ট 'মোটেল চন্দন'-এ পৌঁছলাম, তখন রাত পৌনে এগারোটা প্রায়। মোটামুটি নৈশভোজনপর্ব শেষ করে পরের দিনর প্রাথমিক প্রস্তুতিটুকু সেরেই সোজা ঘুমের দেশে।

"মিনিট পাঁচেক ড্রাইভ করার পরেই আমরা ছোপধারী শিকারীকে দেখলাম"(চিতাবাঘ) 

  ৯৮০ বর্গ কিলোমিটারের কোর জোন এবং ১,৯৪৯ কিলোমিটার বাফার এরিয়া জুড়ে শাল, তেন্দু, বাঁশ, জাম আর পলাশে সাজানো কানহার অন্দর। ১৯৬৫ সালে সরকারিভাবে সংরক্ষিত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন বা Wildlife Protect Act অনুসারে এই জাতীয় উদ্যান ১৯৭৩ সালে Project Tiger এর আওতায় আসে এবং ব্যাঘ্র সংরক্ষিত অঞ্চলের (Tiger Reserve) স্বীকৃতি পায়। কানহার শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যরাজি ছড়িয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের মাণ্ডলে এবং বালাঘাট জেলায়। মাঝে বয়ে চলেছে সাদা-কালো হাঁলো ও বানজার নদীর অববাহিকা। জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পাওয়ার পরই বিতর্ককে সঙ্গী করে জঙ্গলের ভেতরে ছড়িয়ে থাকা প্রায় তিরিশটি বাইগা ও গোন্দ উপজাতির গ্রাম উচ্ছেদ করে নিয়ে আসা হয় জঙ্গলের বাইরে। ছিন্নমূল হন বহু মানুষ। ঠুঠা বইগা আর বিরজু বইগারা হয়তো তাদের উত্তরপুরুষের মধ্য দিয়ে আজও খুঁজে বেড়ায় তাদের আদিভূমি!


ক্রেস্টেড সার্পেন্ট ঈগল
বারাশিঙ্গা দম্পতি

  ভোর সাড়ে পাঁচটা। আকাশে তখন ঊষার সোনালি ছোঁওয়া। জানুয়ারির হাড়কাঁপানো কনকনে শীতে যথাসম্ভব শীতবস্ত্রে আচ্ছাদিত হয়ে তখন একদিকে অসাড়তা ও অন্যদিকে মনের গভীরে লালিত খুশির মৃদু ঝলকের উষ্ণতা। গাইড প্রেম যাদব ও ড্রাইভার কৈলাশ খেরওয়ারের সাথে বেরিয়ে পড়লাম মুক্কির পথে। আমাদের প্রথম দিনের মর্নিং শিফট্ মুক্কি জোনে। কানহায় আসার আমাদের মূল আকর্ষণ যেহেতু বাঘ, তাই প্রেমজী আর কৈলাশজী অন্যদিকে খুব বেশি দৃষ্টিক্ষেপ না করে মুক্কির এমন একটি অংশে নিয়ে গেলেন, যেখানে কানহার অত্যন্ত পরিচিত মুখ- দাপুটে বাঘিনী ধোয়াঝাণ্ডি ফিমেলকে (KTR T-27) প্রায়ই দেখা যাচ্ছে তার ছ'মাস বয়সী চার শাবকের সাথে। একে হাত-পা ঠাণ্ডায় অবশ, তার ওপর আরও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি- প্রবল ঘুমে চোখ প্রায় ঢুলুঢুলু। হঠাৎই জিপসির পাশের জঙ্গলে শোনা গেল দৌড়ঝাঁপ করার আওয়াজ। এবার স্পষ্ট দেখা গেল দুই খুদেকে খেলতে খেলতে, গড়াগড়ি খেতে খেতে নীচের দিকে নেমে আসতে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যেও টান টান উত্তেজনা! বাচ্চারা এখানে মানে মা-ও কাছাকাছিই থাকবে নিশ্চয়ই! এই জন্যই তো মুক্কির এই পথে সকাল সকাল আসা! প্রায় মিনিট পনেরো অপেক্ষা করার পরে এদের কিছুক্ষণের জন্যে নিজেদের মতো ছেড়ে চিতল ও সম্বরদের সুরম্য আহ্বানে সাড়া দিয়ে চলে গেলাম অরণ্যের গহীনে। পথে দেখা এক তরুণ চিতলের সাথে। হরিণ বলতে তার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'deer' ও 'antilope'- দু'টি শব্দের কথা মাথায় এলেও প্রজননকালীন ঋতুতে শিংয়ের পুরোনো আবরণ বা velvet খসে গিয়ে নতুন আবরণ তৈরি হয় 'deer' দেরই ভারতে এই গোষ্ঠীর বড়ো সদস্যেরা হলো চিতল, সম্বর আর কানহার গর্ব বারাশিঙ্গা (Hard Ground Barashinga). এদের শিংকে বলা হয় antler. সফর শেষে ফেলে আসা পথের মাঝেই হঠাৎ দেখা শার্দুল সম্রাজ্ঞীর সাথে! ধোয়াঝাণ্ডি ফিমেলের নাম রাখা হয়েছে তার জন্মস্থান ধোয়াঝাণ্ডি ভ্যালির নামানুসারে। বনদপ্তরের নথিতে সে KTR T-27. তার মা সন্তান লালন পালনে অনবদ্য অনবদ্য আর এক বাঘিনী ছোটি মাদি ওরফে বাবাথেঙ্গা ফিমেল (KTR T-31). সাধারণত যে কোনও big cat, প্রায় চার বা সাড়ে চার বছর বয়সে এসেই মাতৃত্বের প্রথম স্বাদ পেলেও ধোয়াঝাণ্ডির বয়স এখন ছ'বছর এবং এই চার সন্তানের কথা আমরা শুনে আসছি, এরা ওর প্রথমবারের সন্তান (First litter of cubs)। জীনসঙ্গী পছন্দের ব্যাপারে যেকোনও স্ত্রী বেড়ালই খুব খুঁতখুতে। ধোয়াঝাণ্ডিকে অপেক্ষা করতে হয় সার্থক ও উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর জন্য। অবশেষে জীবনে আসে ছোটা মুন্না (KTR T-29), মুক্কির রাজা। কর্তব্যপরায়ণা মা আমাদের গাড়ির সামনে দৃপ্ত পদচারণার পরই অদৃশ্য হয়ে গেলেন ঝোপের গভীরে। যাওয়ার আগে হেনে গেলেন একমুঠো অবজ্ঞার দৃষ্টি। সত্যিই তো! তার এলাকায় আমরাই অনাহূত অতিথি! জানা গেল কিছুটা দূরেই অল্পবয়সী চিতল হরিণ ভোরে শিকার করে সে শাবকদের নিয়ে আসতে চলেছে ভোজনপর্বে। ঠিক আগের দিন পেঞ্চে আমার প্রথম ব্যাঘ্রদর্শন ঘটলেও কানহায় এসেই বাঘের দেখা সার্থকভাবে পেলাম। আমার দেখা প্রথম বাঘিনী সে!


সম্বরের পিঠে শালিক

শিং বাহার

  বিকেলের সাফারিতে আমাদের গাইড মল্লু সিং যাদব। চৌখস এবং অভিজ্ঞ। জঙ্গল তাঁর নখদর্পণে। এবার আমাদের সাফারি কানহা জোনে (মুক্কি, কিসলী, সারহি আর কানহার মধ্যে কানহাই হলো প্রাইম জোন)। স্বাগত জানালো জাঙ্গল্ আউলেট নামের ছোটো এক প্রজাতির পেঁচা। সঙ্গে বার্কিং ডিয়ারের কর্কশ অ্যালার্ম কল। বাঘ নেই তো কাছাকাছি? সতর্ক দৃষ্টি হানলাম। বিদ্যুতের বেগে আমাদের গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার করলো এক চিতাবাঘিনী। তিন শাবকের মা। না, এবার আর খুব ভালো দর্শনলাভ করলাম না আমরা। সফরসঙ্গী সাগ্নিকদার কাছে দুপুরে রিসর্টে শুনেছিলাম তাঁরা যখন সকালে কানহা জোনে ছিলেন, পথের পাশেই একটি গাউরের (বা ইণ্ডিয়ান বাইসন) মৃতদেহ দেখেছিলেন। জেনেছিলাম যে এই পূর্ণবয়স্ক পুরুষ গাউরটিকে আগের দিন শিকার করেছিল বিশালবপু বাঘ বজরঙ্গ (KTR T-64). এবারে আমরা শিকারে মৃতদেহ (ও সেইসঙ্গে শেয়াল ও বুনোশুয়োরের সেই মৃতদেহ সৎকার) দেখলেও শিকারির হদিশ পেলামনা। অন্য একটি জিপসির গাইডের মারফৎ খবর পেলাম মহারাজ বজরঙ্গ কাছাকাছি অবস্থান না করলেও তার সঙ্গিনী নয়না (ওরফে লিঙ্ক-৮ ফিমেল বা KTR T-75) খুব কাছেই টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। মংলু তিরাহ্ নামের মিডোসে পৌঁছে আমরা লক্ষ্য করতে থাকলাম কাছাকাছি কোনও সংকেত পাই কি না। জিপসির ডানদিকে গুটিকয়েক চিতল হরিণ। বাঁ দিকে বারাশিঙ্গার ছোটো একটি দল। কেউ তো তটস্থ নয়! সবাই যে যার মতো তৃণভোজে ব্যস্ত। ইতিমধ্যেই দূরবীণে চোখ রেখে ঘাসের জঙ্গলের একটি প্রান্তে আঙ্গুল দেখিয়ে মল্লু সিং যাদবের আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা- "কৈলাশ, গাড়ি রোখ! ইধার সে নিকলেগি!" অ্যাড্রেনালিন ফ্লো চরমে উঠেছে ততক্ষণে! এই কি তবে বাঘ আসার আগের প্রিলিউড? নিস্তব্ধতা, রহস্যময়তা, রোমাঞ্চ আর সাথে মেশানো ভয়! অবশেষে চিতলের সন্দিহান সাবধানবাণী! প্রায় এক কিলোমিটারের অর্ধেক দূরত্বে দেখা গেল মহারানীকে। সন্দিগ্ধ ও ভীত সন্ত্রস্ত চিতলের সারিকে উপেক্ষা চরে নয়না আমাদের গাড়ির সামনে রাস্তা পেরিয়ে অপর প্রান্তে এলো। জন্ম ২০১৩ সালের জুলাই-আগস্টের দিকে। মা লিঙ্ক-৭ ফিমেল। নয়নার এক যমজ ভাইও ছিল। কিন্তু জন্মের কয়েক সপ্তাহ পরে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। হয়তো অন্য কোনও পুরুষ বাঘ অথবা চিতাবাঘ তার হত্যার জন্য দায়ী। আট নম্বর রুটে প্রথম সাক্ষাৎ পাওয়া গিয়েছিল বলে তার নাম লিঙ্ক-৮ ফিমেল। ধোয়াঝাণ্ডি ফিমেলের মতো সেও প্রথমবার মা হয়েছে সম্প্রতি। আমাদের দুর্ভাগ্য, তার তিনমাস বয়সী শাবকদের দেখা আমরা পাইনি। বাঘ ও বেড়াল গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যেরা নিজের এলাকায় 'সেন্ট মার্কিং' করে (প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী ড. রতনলাল ব্রহ্মচারী scent marking এর খুব জুতসই একটি বাংলা প্রতিশব্দ ব্যবহার করতেন- 'ঊর্ধ্বমূত্রক্ষেপণ', আদর করে 'পিচকারি মারা') ও গন্ধ শুঁকে নিজের এলাকার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে। নিজের অন্দরের সবকিছু ঠিকঠিক আছে কি না তা যাচাই করে নয়না আবার যখন রাস্তার ওপর আসতে যাবে, তখন প্রায় দু'শো মিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ত্রস্ত বারাশিঙ্গার দল অ্যালার্ম কল শুরু করলো। একই ক্লিপিংয়ে বাঘ, চিতল হরিণ ও বারাশিঙ্গাকে লেন্সবন্দী করে তখন উৎসাহ ও আনন্দে দিশেহারা হওয়া থেকে কোনওরকমে নিজেকে সামলে রেখেছি। মৃদু গর্জন করে নিজের বিরক্তির জানান দিয়ে নয়না এগিয়ে চললো তার অন্দরের অপর প্রান্তের টহলদারীতে। বিদায় জানাতে কারই বা ইচ্ছে করে? কিন্তু জানাতেই হয়। নীলাঞ্জন জেঠু (নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী)-র কথায় বলতে গেলে তাঁর ২০১২-র একটি আন্তরিক লেখা 'শিবাজী মহারাজ- তাডোবা আর আমি'-র প্রসঙ্গ এনে কয়েকটি হৃদয় ছোঁওয়া কথা বলতেই হয়, যেগুলি ছাড়া বোধ হয় এই মুহূর্তকে শব্দে বাঁধা অসম্ভব। ভালোবাসাকে গৃহপালিত করে রাখা যায়না। সেটা তো ভালোবাসার একটা দিক মাত্র। সত্যিকারের ভালোবাসা আকাশের মতোই উদার এবং অরণ্যের মতোই গভীর ও সংবেদনশীল। নয়নার দর্শন তাই আমাদের আরণ্যক উপহার হলেও তাকে আমরা আটকে রাখতে তো পারিনা! জানিনা, আবার কবে তার দেখা পাবো? বারাশিঙ্গার তীব্র সাবধানবাণী আর ময়ূরের কেকাধ্বনি তখন দূরে মুখরিত হয়ে চলেছে।


নয়না

  সংবিৎ ফিরল। না, বারাশিঙ্গার অ্যালার্ম কলে নয়। ফোনের অ্যালার্মে! স্বপ্নেই বিভোর হয়ে ছিলাম বটে! তবে স্মৃতি আজও অমলিন। পরের দু'টো দিন কানহায় বারাশিঙ্গাদের দলের সাথে এবং শেষ দিন অন্যতম প্রভাবশালী বাঘ কড়াইঘাটি মেলকে (KTR T-2) দেখে বেশ জমজমাট কেটেছিল বটে! স্মৃতির মণিকোঠায় থেকে যাবে শেষদিনর কিসলী ওয়ারহোলের সূর্যাস্তে 'কাজলনয়না হরিণী'দের সমাগম (যতদূর মনে আছে অন্তত ওখানে কোনও পুরুষ হরিণ তখন ছিলনা, ছবিও সেই কথাই বলে)। মনে রয়ে যাবে কিসলী গেস্ট হাউসে পড়ন্ত বিকেলে কানহার ফিল্ড ডিরেক্টর ড. সঞ্জয় শুক্লার সাথে বসে 'ব্রেভ হার্টস্ অব ইণ্ডিয়া'-র ডেমনস্ট্রেশন দেওয়া ও আলোচনা। ১৫ জানুয়ারি ছিল দীপকদার জন্মদিন। উনি বার বার বলছিলেন, "মেল টাইগার তো হলো, একটা যদি গাউরের দেখা পেতাম!" সন্ধ্যের মুখেই আমাদের চায়ের আসরে এসে দূরে উপস্থিতি জানান দিল এক পুরুষ গাউর। জন্মদিনের সেরা উপহার দীপকদার জন্য। বন্দিদশায় আজ বড্ড মনে পড়ছে আরণ্যকদের কথা, আরণ্যক হৃদয়ের কথা। আমরা কবে আবার মুক্ত হ'ব জানা নেই। আবার কবে দেখতে পাবো তোমাদের? আরও কিছুটা সময় তো কাটবেই বন্দিদশায় তারপরের নতুন সূর্যে স্নাত কোনও এক সকালে শিশিরভেজা ঘাসের বনে আবার যদি দেখা হয়, কেমন হবে বলোতো? আবারও ময়ূরেরা জানান দেবে নয়নার দৃপ্ত চলাফেরার নীরব শব্দকে। শীতের পড়ন্ত বিকেলে চোখ খুঁজবে কোনও গাছে ডালে অলস চিতাবাঘ বিশ্রাম নিচ্ছে কি না। দেখা কখন পাবো, তা জানা নেই। কিন্তু, আর সত্যিই যে পেরে উঠছিনা তোমাদের সান্নিধ্যে না গিয়ে? যখন হঠাৎ আবার ওই গহনে দু'জনের দেখা হবে, তৃষিত হৃদয়কে চিনতে পারবে তো? রইলাম প্রতীক্ষায়...
সোনালী ঊষার ছোঁওয়ায়







ছবিগুলো তুলেছেন লেখক নিজেই।

© 2020 প্রতীক মহাপাত্র





ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ২


বারিধারা

                অন্বিতা চ্যাটার্জী                       

কোনো এক নামহীন,অগোছালো সন্ধ্যা-
আমার মনের গন্ডি পেরিয়ে
তোর নিঃশব্দ পদার্পণ,
সাদরে বরণ করলাম তোকে।
বাইরের অবিশ্রান্ত ধারায়
কত পুরোনো ইতিহাস ধুয়ে যাচ্ছে,
কত-শত প্রতিশ্রুতিরা ভিজে চলেছে অক্লান্তভাবে...
শরীরের প্রত্যেকটা তার তোর স্পর্শে
ধ্বনিত হল-
কোনো নতুন রাগের সৃষ্টিতে।
উন্মাদ হলাম আমরা-
বৃষ্টির জল ধুয়ে দিল
শরীরের সমস্ত ক্ষত।
এখনও আমরা ভিজছি,ভিজে চলেছি,
কোনো এক নতুন সৃষ্টির সন্ধানে।


© 2020 অন্বিতা চ্যাটার্জী                        

ভোকাট্টা ব্লগজিন সংখ্যা ১


স্নেহ

               ধৃতিপর্ণা সামন্ত

সে বাবার মতোই স্নেহশীল,
কিছুটা মায়ের মতো ও।
আসলে 'স্নেহের' ওরকম লিঙ্গনির্ধারণ ঠিক নয়।
'স্নেহ' স্নেহই হয়।
যত বয়স বাড়ছে, অনুভূতির নিব ভোঁতা হচ্ছে।
স্নায়ুতন্ত্র দিনদিন অক্ষম হচ্ছে 'ভালোবাসা' বস্তুটির পরশ নিতে।
কিন্তু, বড়ো লোভ তার।
আশেপাশের আদরকণা শুষে নিতে চায় সে।
ব্যাটা বোঝে না --'যা তোর প্রাপ্য নয়, তার পেছনে দৌড়ে লাভ নেই।"
ফুরিয়েছে খড়ের নৌকো-রঙ্গন-ফুরুসের দিন।
তাই, ঢাকে কাঠি পড়লেও মন সেই শিথিল-উদাসীন।
যখন, প্রজাপতির ডানার রঙ মাখতাম আর হৈহুল্লোড়ে বউ-বসন্ত,
তখন ও সে এরকমটাই ছিল-
বাবার মতোই স্নেহশীল,
কিছুটা মায়ের মতো ও।
আসলে 'স্নেহের' ওরকম লিঙ্গনির্ধারণ ঠিক নয়।

 

© 2020 ধৃতিপর্ণা সামন্ত


প্রকাশিত হলো ভোকাট্টা ব্লগ

প্রকাশিত হলো ভোকাট্টা ব্লগ। আপনারা কবিতা পাঠান আমাদের। আমরা প্রকাশ করবো ভোকাট্টা ব্লগে।

নিয়মাবলী –

১) লেখাটি অবশ্যই মৌলিক (নিজের রচনা) হতে হবে।
২) আপনারা লেখা পাঠাবেন – vokattamagazine@gmail.com এ।
৩) লেখা পাঠানোর সময় অবশ্যই উল্লেখ করবেন “ব্লগজিন এর জন্যে”।
৪) লেখার বিষয়বস্তু অবশ্যই রুচিসম্পন্ন হতে হবে।
৫) শুধুমাত্র টাইপ করা ওয়ার্ড ফাইল এ লেখা পাঠানো যাবে।
৩) লেখা পাঠানোর সময় অবশ্যই উল্লেখ করবেন “ব্লগজিন এর জন্যে”।
৪) লেখার বিষয়বস্তু অবশ্যই রুচিসম্পন্ন হতে হবে।
৫) শুধুমাত্র টাইপ করা ওয়ার্ড ফাইল এ লেখা পাঠানো যাবে।
৬) কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ বৃত্তান্ত ও সদ্য পড়া কোনো বইয়ের ভালোলাগা-মন্দলাগা এই বিষয় গুলি নিয়ে লেখা পাঠানো যাবে।
৭) লেখার সাথে নিজের এক কপি ছবি পাঠাতে হবে।


প্রত্যেকটি নিয়মাবলী মেনে লেখা পাঠান। নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকাশ করবো আমরা। আরও জানতে চোখ রাখুন – vokattamagazine.blogspot.com ও Vokatta- ভোকাট্টা কিশোর সাহিত্য পত্রিকা ও ব্লগজিন এর ফেসবুক গ্রুপে।

18.07.2020